সাতকানিয়ায় অবহেলিত দক্ষিণ ঢেমশা চৌমুহনী উচ্চ বিদ্যালয়
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার অবহেলিত এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম দক্ষিণ ঢেমশা চৌমুহনী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়। যার গায়ে এখনও লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া। মনে হচ্ছে, ডিজিটাল বাংলাদেশে অ্যানালগ যুগে বসবাস। উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারিভাবে বহুতল ভবন নির্মিত হলেও এই বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষের অভাবে গাদাগাদি করে বসে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। বেঞ্চের অভাবে অনেক শিক্ষার্থীকে দাঁড়িয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে। আবার অনেক শিক্ষার্থী জায়গা না পেয়ে বাইরে ঘোরাফেরা করে দিন পার করছে। ফলে দিন দিন বেড়ে চলেছে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা।
অথচ উপজেলার মধ্যে সন্তোষজনক ফলাফল অর্জনসহ শিক্ষার আলো ছড়িয়ে প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। শ্রেণিকক্ষ সংকট গুছাতে বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বারবার ধর্না ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের ডিও লেটার দিলেও এখনও কোনো সুরাহা হয়নি। ফলে দিনের পর দিন বিদ্যালয়টিতে নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার পরিবেশ।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ৪ শতাধিক শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছেন। এর মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা বেশি। একজন জুনিয়র শিক্ষকসহ ১১ জন শিক্ষক রয়েছেন এ বিদ্যালয়ে। এছাড়া খন্ড কালীন হিসেবে রয়েছেন একজন অফিস সহকারী। একজন করে আয়া ও নৈশ প্রহরী। ২০২৪ সালে প্রথমবারের মতো এই বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার সময় আধাপাকা টিনশেড দিয়েচার রুম বিশিষ্ট কক্ষে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু সম্প্রতি বয়ে যাওয়া বন্যায় ওই শ্রেণিকক্ষগুলো ঝুঁকিপূর্ণভাবে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তবু শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে ঝুঁকি নিয়ে কয়েক দিন ক্লাস চলে। পরবর্তীতে অধিক ঝুঁকি বুঝতে পেরে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে এলাকাবাসীর সহায়তায় নির্মিত আধাপাকা টিনসেডের কযয়েকটি রুমে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা গাদাগাদি করে ক্লাস করছেন।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, জরাজীর্ণ পুরাতন ভবনের দেয়ালে বড় ধরনের ফাটল দেখা দিয়েছে। টিনের চালাগুলো ফুটো হয়ে কক্ষে রোদের আলো প্রবেশ করছে। ফলে বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীদের টিনের চালা আধাপাকা কক্ষে গাদাগাদি করে শিক্ষার্থীদের বসিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম চালাতে বাধ্য হচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। দেখা গেছে, প্রতিটি বেঞ্চে অন্তত ৬ জন শিক্ষার্থী বসে ক্লাস করছেন। অনেক সময় লিখতে গেলে বেগ পেতে হচ্ছে। আবার অনেক শিক্ষার্থী বেঞ্চে জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়েও ক্লাস করছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহেদুল আনোয়ার চৌধুরী জানান, দীর্ঘ সময় গাদাগাদি ও দাঁড়িয়ে ক্লাস করার ফলে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে। অনেক সময় শ্রেণিতে জায়গা না পেয়েঅনেক শিক্ষার্থী বাইরে ঘোরাফেরা ও ক্লাসে অনুপস্থিত থাকে। ফলে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদ সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফয়েজ আহমদ লিটন বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার ১৯ বছরের মধ্যে কোনো সরকারি ভবন পাইনি বিদ্যালয়টি। বর্তমানে এলাকার সমাজহিতৈষী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের সহযোগিতায় আধাপাকা টিনসেডের একটি ভবনে কোনো রকমের শ্রেণি কার্যক্রম চলছে। এলাকার শিক্ষা প্রসারে বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।’
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার সরকার বলেন, ‘এমপি মহোদয়ের ডিও লেটার পেয়েছি। সহসা ভবন বরাদ্দের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।’
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিল্টন বিশ্বাস বলেন, ‘আমি এরই মধ্যে বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছি। নতুন ভবন পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আশা করি, অচিরেই ভবনের বরাদ্দ পাওয়া যাবে।’
স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী বলেন, ‘বিদ্যালয়টি আওয়ামীলীগ সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী এলাকায় নারী ও শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা রাখছে। শ্রেণিকক্ষ সংকটের বিষয়টি জেনে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আমি ডিও লেটার পাঠিয়েছি। আশা করি শিঘ্রই নতুন ভবনের বরাদ্দ আসবে।’