সীতাকুণ্ডে কিস্তির টাকা জোগাড় করতে না পেরে নারীর আত্মহত্যা
সীতাকুণ্ডে বিবি খাদিজা ওরফে পুতুল বেগম (৫০) নামে এক নারী আত্মহত্যা করেছে। আজ সোমবার সকালে উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের মধ্যম মাহমুদাবাদ (বাহারিয়া বাড়ি) এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত পুতুল বেগম একই এলাকার জহিরুল ইসলামের স্ত্রী।
নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, পুতুল বেশ কয়েকটি এনজিও সংস্থা থেকে কিস্তির টাকা নিয়েছেন। সোমবার সকালে দুটি এনজিওকে সাপ্তাহিক কিস্তির টাকা দেওয়ার কথা ছিল। রোববার রাতে কিস্তির টাকা নিয়ে তার বড় ছেলে আব্দুল আলীমের সাথে কথা কাটাকাটিও হয়েছে। ছেলে কিস্তির টাকা না দিয়ে মায়ের সাথে রাগারাগি করে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পর ঘরের তীরের সাথে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে পুলিশ জানায়, রাতের যেকোনো সময় নিজ ঘরের তীরের সাথে রশি লাগিয়ে ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেন ওই নারী। সকালে ঘরের দরজা খোলা দেখে তার ছোট ছেলে আব্দুল আজিজ সায়েম মায়ের ঘরে প্রবেশ করেন।
প্রবেশের পর ভেতরে মায়ের ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পেয়ে চিৎকার করে আশপাশের প্রতিবেশীদের ডাকেন। পরে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে বিষয়টি দেখার পর স্থানীয় ইউপি সদস্যকে অবহিত করেন।
তিনি বিষয়টি থানা পুলিশকে জানালে তারা ঘটনাস্থলে এসে মরদেহটি উদ্ধার করেন।
নিহতের ছোট ভাই আশিক জানান, উত্তরবঙ্গের প্রবাসী এক ব্যক্তির সাথে তার বোনের বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পর দুই ছেলেসহ তাঁর বোনকে তাদের বাড়িতে রেখে বোন জামায় পালিয়ে যায়। এরপর থেকে ছেলেদের নিয়ে তাদের বাড়িতে বসবাস করছিল তার বোন।
সে ছেলেদের জন্য ও সংসার খরচের জন্য বেশ কয়েকটি এনজিও সংস্থা থেকে কিস্তির টাকা নিয়েছিল। আজ দুটি এনজিও সংস্থার কিস্তির টাকা দেওয়ার তারিখ ছিল। কিস্তির টাকা নিয়ে রাতে ভাগিনা আব্দুল আজিজের সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছিল তাঁর বোনের।
আশিক আরও জানায়, কিস্তির টাকা পরিশোধ নিয়ে তাঁর বোন খুব মানসিক যন্ত্রণায় ছিল। সোমবার সকালে টাকা নিতে কিস্তির লোক আসবে। আর টাকা দিতে না পারলে তাদের কাছে অপমানিত হতে হবে তাঁর। তাই কিস্তি পরিশোধের চাপ থেকে রেহাই পেতে আমার বোন আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে বলে ধারণা করছি আমি।
বাড়বকুণ্ড ইউপি চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্ল্যাহ মিয়াজী বলেন, নিহত ওই নারী একেবারেই হতদরিদ্র। আজ দুটি এনজিওর সংস্থার কিস্তি পরিশোধের কথা ছিল তার। কিস্তির টাকা জোগাড় করতে না পারায় মানসিক চাপে পড়ে ওই নারী আত্মহত্যা করেছে। পুলিশের সাথে কথা বলে নিহত ওই নারীর মরদেহ দাফনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল উদ্দিন জানান, স্থানীয় জনপ্রতিনিধির খবরের ভিত্তিতে নিহত ওই নারীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পরে ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যের অনুরোধে বিনা ময়নাতদন্তে মরদেহ দাফনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় অপমৃত্য মামলা দায়ের করা হয়েছে।