স্লিপ চক্রে অস্থির এলাচের দাম
গেল ১০ মার্চ দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে মসলা বিক্রির সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান এবি ট্রেডার্সে অভিযান পরিচালনা করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। সেসময় প্রতিষ্ঠানটিকে দ্বিগুণ দামে এলাচ বিক্রির দায়ে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ওই অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত এনবিআরের বরাত দিয়ে সেসময় আমদানি মূল্যের সঙ্গে ১৫ শতাংশ মুনাফা যোগ করে মসলাপণ্যটির বাজারমূল্য ১৪শ ৫০ টাকা বলে জানান গণমাধ্যমকে। কিন্তু সেসময় খাতুনগঞ্জে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল এলাচ। তবে মূল্যবৃদ্ধির পেছনে কারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করার কথাও জানান প্রতীক দত্ত। এরপর অবশ্য ২২শ থেকে আড়াই হাজার টাকায় নেমে যায় পণ্যটির দাম।
গেল এপ্রিলের শুরুতেও একই দামে বিক্রি হয়েছে পণ্যটি। এরপর গেল মাসের শেষের দিকে কোরবানির ঈদ সামনে রেখে হঠাৎ উৎপাত বাড়ে স্লিপ ব্যবসায়ীদের। কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই তাদের কারসাজিতে পণ্যটির দাম বেড়ে যায় দেড় হাজার টাকার মতো। এতে চার হাজার টাকা ছুঁয়ে যায় এলাচের দাম। তবে এখনও মাস দেড়েক বাকি কোরবানির ঈদের, আর তাতে মসলা বেচাবিক্রি শুরু হয়নি পুরোদমে। তুলনামূলক চাহিদা কম থাকায় স্লিপ কিনে বেকাদায় পড়েন অনেকে, ফলে কেজিতে ৫শ থেকে ৬শ টাকা কমে যায় দাম। তবে এখনও মূল বাজার দরের চেয়ে হাজার টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে মসলাজাত পণ্যটি। গতকাল (শনিবার) খাতুনগঞ্জে ৩৪শ থেকে ৩৫শ কেজি দরে বিক্রি হয়েছে এলাচ। পণ্যটির চড়া দামের জন্য ব্যবসায়ীরাও দোষছেন স্লিপ বিক্রেতাদের।
ব্যবসায়ীরা জানান, পণ্যের জোগান বা সরবরাহ ছাড়াই স্লিপ বিক্রির মাধ্যমে এই অসাধু চক্র তেল, চিনি, মসলাসহ যে কোন পণ্যের দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে স্লিপ বিক্রেতা চক্র হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও সুনাম ক্ষুণ্ণসহ ক্ষতিগ্রস্ত হন ব্যবসায়ীরা।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দীন বলেন, ‘এলাচের দাম গেল কয়েকদিন আগে অনেক বেশি বেড়ে গিয়েছিল, এখন ৫শ টাকার মতো কমেছে। দাম বৃদ্ধির পেছনে তেমন কোনো কারণ নেই। স্লিপ বিক্রেতারা কারসাজি করে এটা বাড়িয়েছে। তাদের কারণে ব্যবসায়ীদের সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে, তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা দরকার। তারা তেল, চিনিসহ যে পণ্যের দিকে তাকায়, ওই পণ্যটির দাম বেড়ে যায়।’
খাতুনগঞ্জের মসলা ব্যবসায়ী অমর কান্তি দাশ বলেন, ‘আমরা মাস খানেক আগেও ২৭শ-২৮শ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি এলাচ। কিন্তু স্লিপ বিক্রেতাদের কারণে এটার দাম ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে গেছে। এখন কিছুটা কমেছে।’
এলাচ ছাড়াও দাম কমেছে দারুচিনি, জিরা ও লবঙ্গের। গতকাল গেল সপ্তাহের চেয়ে ১০ টাকা কমে ৩৭৫ টাকা দারুচিনি, ১০০ টাকা কমে ৬০০ টাকা জিরা, ৫০ টাকা কমে ১৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে লবঙ্গ। তবে এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৩০ টাকা বেড়েছে গোল মরিচের দাম। গতকাল ৭৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে পণ্যটি।
এলাচসহ সব ধরনের মসলার বাজার নিয়ন্ত্রণে শিগগিরই অভিযান শুরুর কথা জানিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপপরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ উল্ল্যাহ। তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে আমরা নির্দেশনা পেয়েছি, শিগগিরই মসলার বাজার তদারকির জন্য অভিযান শুরু হবে।’
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘স্লিপ ব্যবসার বিষয়টা অনেকটা জুয়ার মতো। এখানে দাম বাড়লেই তাদের লাভ। তাই পুঁজিবাজারের মতো কৃত্রিম চাহিদা বাড়িয়ে পণ্যের দাম বৃদ্ধি করে। এটা সম্পূর্ণ অবৈধ। সবার সামনে এরকম একটা অবৈধ কাজ চলছে, কিন্তু প্রশাসনিক লোকজন কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না- এটা খুবই দুঃখজনক।’ স্লিপ ব্যবসা বন্ধে বেচাকেনার ক্ষেত্রে পাকা রশিদ নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।