আন্তর্জাতিক

হামলার সময় ইসরায়েলকে রক্ষায় সহযোগিতা করেছে সৌদি

ইরান গত শনিবার (১৩ এপ্রিল) স্থানীয় সময় রাতে ইসরায়েলের ওপর হামলা চালায়। এসময় ইরানের ছোড়া বেশির ভাগ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন আকাশে থাকতে ধ্বংস করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। এই হামলা রুখতে বেশ কয়েকটি দেশের কাছ থেকে সহায়তা পেয়েছে তারা। এ তালিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। এসব দেশের পাশাপাশি কয়েকটি আরব দেশও ইসরায়েলের সাহায্যে এগিয়ে আসে। দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে জর্ডান ও সৌদি আরব।

জর্ডান বা সৌদি আরবের মতো দেশগুলো যে ইরানের মিসাইল ও ড্রোন আক্রমণকে নস্যাৎ করে দেওয়ার জন্য সক্রিয় ছিল, সেটাকে স্বাভাবিক বলেই অভিহিত করেছেন অনেক বিশ্লেষক। ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের বিরোধটা অনেক পুরোনো। তার পরও গাজায় ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞের পর অনেকেই ধারণা করেছিলেন, ইরানের এই হামলায় সৌদি আরব বুঝি ইরানের পক্ষ নেবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। সৌদির অবস্থান কিছুটা বোঝা গেলেও জর্ডানের ভূমিকা অনেককেই অবাক করেছে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো যখন জর্ডানের ওপর দিয়ে ইসরায়েলের দিকে যাচ্ছিল, জর্ডান তার বেশ কয়েকটিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এভাবে জর্ডান নিজেকে ইসরায়েলের সহযোগী শক্তি হিসেবেই এবার আবির্ভূত হয়েছে। কেবল ইরানের ড্রোনগুলোকে ধ্বংসই নয়, একই সঙ্গে জর্ডান তার আকাশকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের জন্য খুলেও দিয়েছে।

ব্রিটেনের প্রভাবশালী মিডিয়া দি ইকোনমিস্ট জানায়, সৌদি আরবসহ বেশ কয়েকটি উপসাগরীয় দেশ এই সংঘাতে পরোক্ষভাবে ইসরায়েলের পক্ষ অবলম্বন করছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রসহ ইসরায়েলের পক্ষালম্বনকারী দেশের যুদ্ধবিমানের তেল নেওয়ার জন্য তাদের বিমানবন্দরগুলোকে উন্মুক্ত করে দিয়েছে।

মিডল ইস্ট অ্যান্ড নর্থ আফ্রিকা প্রোগ্রামের ডিরেক্টর জুলিয়েন বার্নস ডিকের মতে, ইরানের এই হামলার ফলে এটা স্পষ্ট হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের কোনো কোনো দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে আছে। দেখা গেছে, ক’দিন আগেও যে দেশগুলো গাজার ঘটনায় ইসরায়েলের ঘোরতর বিরোধিতা করেছে, তাদের অনেকেই ইসরায়েলের পক্ষ নিচ্ছে।

গাজার ঘটনায় এতদিন জর্ডানকে খুবই সোচ্চার দেখা গেছে। এর দৃশ্যমান কারণও ছিল। জর্ডানে প্রচুর ফিলিস্তিনি রয়েছে। দেখা গেছে, প্রতি পাঁচজনের একজন ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত। এমনকি জর্ডানের বর্তমান রানীও ফিলিস্তিনের। তাই গাজায় ইসরায়েলের নৃশংসতায় জর্ডানের এমন তীব্র সমালোচনা ছিল খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু জর্ডানই যখন এবার ইসরায়েলের সমর্থনে এতটা প্রকাশ্য ভূমিকা রেখেছে, অনেকেই অবাক হয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, জর্ডানের এবারের ভূমিকা অনেকটা তাদের নিজেদের স্বার্থেই। ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের সীমান্ত রয়েছে। তাছাড়া তারা আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র। কাজেই নিজের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও আত্মরক্ষার স্বার্থেই দ্রুততার সঙ্গে ইসরায়েলের পক্ষ নেওয়ার কথা ঘোষণা করা ছাড়া তাদের সহজ কোনো পথ ছিল না।

এর আগে ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামলা চালিয়েছিল ইসরায়েল। ওই হামলার জবাবে হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে তেহরান। ইরানের হামলা শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী কয়েক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ধ্বংস করেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ইরানের ছোড়া প্রায় সব ক’টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ধ্বংস করতে ইসরায়েলকে সহায়তা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। হামলা ঠেকিয়েছে যুক্তরাজ্যের যুদ্ধবিমানও। সিরিয়ায় থাকা যুক্তরাজ্যের রয়েল এয়ারফোর্সের জঙ্গি বিমান ইরানের নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের অনেকগুলো আকাশেই ধ্বংস করে দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d