জাতীয়

১১ দিনেও ভারতের ভিসা পাননি আনারের মেয়ে

ভিসা না পাওয়ায় ভারতে যেতে পারছেন না সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনসহ পরিবারের ঘনিষ্ঠব্যক্তিরা।

দুই দেশের গোয়েন্দাদের ভাষ্য মতে, কলকাতার নিউ টাউনে সঞ্জিভা গার্ডেনসের যে ফ্ল্যাটে আনারকে হত্যা করা হয়েছে, তার সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা হয়েছে কিছু মাংসের টুকরা। সেগুলো এমপি আনারের কি না, তা জানতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তার রক্তের সম্পর্কীয় স্বজনদের সেখানে যাওয়া প্রয়োজন।

এ উদ্দেশে ১১ দিন আগে গত ২২ মে আনারের মেয়ে ডরিন এবং সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী আব্দুর রউফ ভারতের ভিসার জন্য আবেদন করেন। তবে এখনও তারা ভিসা পাননি।

রোববার (২ জুন) রাতে এমপি আনারের বক্তিগত সহকারী আব্দুর রউফ বলেন, আমরা এখনও ভিসা পাইনি। প্রতিদিনই খোঁজ নিচ্ছি, আজ (রোববার) তারা আমাদের বলেছে সোমবার বিকাল ৪টা থেকে ৫টার মধ্যে স্পেশাল কাউন্টার থেকে আমাদের পাসপোর্ট নিয়ে আসার জন্য।

তারা ভিসা দিয়েছে (ইস্যু করেছে) কি না তা এখনও জানি না। কী কারণে বিলম্ব হচ্ছে বা আদৌ ভিসা দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়েও আমাদের কিছু জানানো হয়নি।

রউফ বলেন, গত ২২ মে ডরিন ও তার ভিসার জন্য ঢাকায় ভারতের দূতাবাসে আবেদন করেন তারা। কলকাতার সঞ্জিভা গার্ডেনসের সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার হওয়া দেহাবশেষের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সেখানে ডরিনের যাওয়া প্রয়োজন।

এমপি আনারের এক ভাইও আমাদের সঙ্গে কলকাতা যাবেন। তার অবশ্য আগে থেকেই ভারতের ভিসা রয়েছে। একসঙ্গে যাবেন বলে তিনিও অপেক্ষায় রয়েছেন।

গ্রেপ্তার আসামিদেরজিজ্ঞাসাবাদের বরাতে দুই দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনার চিকিৎসার কথা বলে ১১ মে কলকাতায় যাওয়ার পর ১৩ মে তাকে সঞ্জিভা গার্ডেনসে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার পর তার লাশ টুকরা টুকরা করে হাড় থেকে মাংস ছাড়িয়ে তাতে হলুদ লাগিয়ে নিউ টাউনের পাশে একটি খালে ও আরও কয়েকটি স্থানে ফেলে দেয় খুনিরা।

ভারতের গোয়েন্দাদের দেওয়ার তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকারী সন্দেহে বাংলাদেশে গ্রেপ্তার তিন ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে হত্যার লোমহর্ষক বর্ণনা।

কলকাতা গোয়েন্দাদের হাতে খুনি সন্দেহে গ্রেপ্তার হয়েছে কসাই জিহাদ। তাকে নিয়ে লাশের খোঁজে কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানোর খবর এসেছে।

গত ২৮ মে সঞ্জিভা গার্ডেনসের সেপটিক ট্যাংক থেকে টুকরা টুকরা করে কাটা কয়েক কেজি মাংস উদ্ধার করা হয়; যা এমপি আনারের দেহাবশেষ হতে পারে বলে ধারণা দুই দেশের গোয়েন্দাদের।

ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনার কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। গত ১১ মে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। প্রথমে কলকাতার বরাহনগরে তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন।

এরপর স্থানীয় থানায় জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস। তদন্ত শুরু হয় দুই দেশে। এরপর ২২ মে সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, নিউ টাউনের এক বাড়িতে খুন হয়েছেন এমপি আনার।

এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ভারতীয় পুলিশের দেওয়া তথ্যে বাংলাদেশে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। তারা এখন দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে রয়েছেন।

ওই তিনজন হলেন- আমানুল্লা সাঈদ ওরফে শিমুল ভুঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভুঁইয়া (৫৬), তানভীর ভুঁইয়া (৩০) ও সেলেস্টি রহমান (২২)।

মঙ্গলবার যশোর থেকে সাইফুল আলম মোল্লা মেম্বার নামে আরেকজনকে আটক করে ডিবি। তিনি পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির নেতা খুলনার শিমুল ভুঁইয়ার সহযোগী বলে পুলিশ জানিয়েছে। তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

পুলিশ বলছে, এমপি আনার হত্যার ‘হোতা’ তার বাল্যবন্ধু ও ঝিনাইদহের যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আখতারুজ্জামান ওরফে শাহিন মিয়া। আর হত্যাকাণ্ডটি বাস্তবায়ন করেছেন চরমপন্থি নেতা আমানুল্লা ওরফে শিমুল। আনার কলকাতায় যাওয়ার পরদিন বৈঠক করার জন্য নিউ টাউনে আখতারুজ্জামান শাহীনের ভাড়া বাসায় যান। সেখানেই আসামিরা তাকে হত্যা করে।

তদন্তের এক পর্যায়ে জিহাদ হাওলাদার নামের এক কসাইকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তাকে নিয়ে কয়েকটি খাল, জঙ্গলে ব্যাপক তল্লাশি চালিয়েও আনারের লাশের হদিস মেলাতে পারেনি কলকাতা পুলিশ।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, ২৪ বছর বয়সী জিহাদ হাওলাদার বাংলাদেশের খুলনার বাসিন্দা। অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিলে‌ন তিনি। আনারকে ‘খুনে’র প্রায় দুই মাস আগে অভিযুক্তরা জিহাদকে মুম্বাই থেকে কলকাতায় নিয়ে আসেন।

জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে সিআইডির সদস্যরা বলেছেন, আখতারুজ্জামানের নির্দেশেই তিনি ‘সব কাজ’ করেছেন। আরও চারজন বাংলাদেশি এ কাজে সাহায্য করেছেন।

তদন্তের মধ্যে ভারতীয় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দলের বাংলাদেশ ঘুরে যাওয়ার একদিন পর ২৫ মে কলকাতায় যান বাংলাদেশের ডিবির তিন কর্মকর্তা। তারা কসাই জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং তাকে নিয়ে সেই বাড়ি ঘুরে দেখেন, যেখানে আনারকে হত্যার কথা বলা হচ্ছে।

ঢাকার ডিবি কর্মকর্তাদের কলকাতায় থাকার সময় ওই বাড়ির অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকের সেপটিক ট্যাংক থেকে মঙ্গলবার বেশ কিছু মাংসের টুকরো উদ্ধার করার কথা জানায় পুলিশ। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পরে তা ভারতের কেন্দ্রীয় ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়। এই ডিএনএ নমুনা মেলানোর জন্য রক্তসম্পর্কীয় স্বজন প্রয়োজন হয়।

লাশের টুকরা উদ্ধার হওয়ার পরদিন ২৯ মে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে নিজেদের বাসার সামনে কলকাতার যাওয়ার উদ্দেশে ভারতের ভিসা আবেদন করার পর সাংবাদিকদের ডরিন বলেছিলেন, আমার ভিসাটা দিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। ওরা বলেছিল একটা টেক্সট আসবে, ওটা রিসিভ করলে পাসপোর্টটা আজকেই দিয়ে দেবে হয়ত। ভিসাটা পেলেই ভারতে যাব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

%d