২০ বছরে বদলে যাওয়া গুয়াংজু শহর ও আমাদের ঢাকা
গরমে হাঁস ফাঁস করতে থাকা নগরবাসী এখন একটু ছায়ার খোঁজে মরিয়া। কিন্তু ঢাকায় ভবনের উত্তপ্ত ছায়া ছাড়া গাছের শীতল ছায়ার দেখা মেলা বিরল। অথচ প্রকৃতির এই বিরুপ আচরণের জন্য আমরাই দায়ি। চাইলেই যে সবুজের মাঝেও জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করা যায় তার বড় প্রমাণ চীনের বাণিজ্যিক রাজধানী গুয়াংজু। এই শহরে বড় বড় শিল্প কারখানা যেমন আছে, তেমনি আছে শহর জুড়ে সবুজায়ন। অথচ ভবন বানাতে গাছ কাটার কোনো বিকল্প দেখছেনা রাজধানী ঢাকা।
দুই হাজার বছরের পুরানো শহর চীনের গুয়াংজু। আয়তনে ঢাকার পাঁচ গুণ। শহরের প্রতিটি ইঞ্চি যেন গড়া হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। অথচ এই পরিবর্তনের গল্পটা মাত্র ২০ বছরের আগের। তখন কল কারখানার ধোঁয়া আর দূষিত বর্জ্যের শহর ছিলো গুয়াংজু। যা চিন্তায় ফেলেছিলো নগর প্রশাসনকে। তখন থেকে অর্থনীতিকে ঠিক রেখেই তারা বিনিয়োগ করে নগরে সবুজ বাড়াতে।
গুয়াংজুতেও তাপমাত্রা ৪০ ওপরেই থাকে। কিন্তু মানুষ সেই তাপদাহ টের পায়না। বরং গাছ আর পর্যাপ্ত জলাশয় থাকায় বছরজুড়েই বিশুদ্ধ পান গুয়াংজুর মানুষ। এই শহরে হর্ন নিষিদ্ধ হয়েছে ২০ বছর আগে। ট্রাফিক জ্যাম আছে। কিন্তু ওভার টেকিং এর চেষ্টা নেই কারও মধ্যেই।
দুই কোটি মানুষের এই শহরে মাথাপিছু সবুজ পার্কের পরিমাণ প্রায় সাড়ে সতেরো স্কয়ার মিটার। বিশ্বের বিজ্ঞানভিত্তিক একশটি শহরের মধ্যে আট নাম্বারে থাকা গুয়াংজুতে আছে প্রায় ৩৯ শতাংশই বনাঞ্চল। অথচ ২৫ শতাংশ থাকলেই যথেষ্ট ছিলো।
রাস্তার পাশে প্রায় চার হাজার কিলোমিটার জুড়ে শুধু গাছ আর গাছ। খাল আছে হাজারেরও বেশি। ফলে অতিবৃষ্টিতে যেমন জলাব্ধতা নেই। আবার সবুজের কারণে তাপদাহের অস্বস্তিও নেই।
বিপরীতে ঢাকার যতো উদ্যোগ আর বিনিয়োগ সবই কেবল ভবন নির্মাণকে ঘিরে। এখানে গাছ কেটে ভবন হয়। কিন্তু সেই গাছ আর ফিরে আসেনা। যে কোনো আদর্শ শহরে ২৫ শতাংশ গাছ থাকতে হয়। আর ঢাকায় তা মাত্র আট থেকে ১০ শতাংশ।
শহর আর সভ্যতা গড়ে ওঠে প্রকৃতিকে ঘিরেই। সেই প্রকৃতি ধ্বংস করার মতো অপরাধের ভয়াবহ শাস্তিই এখন ভোগাচ্ছে নগরবাসীকে।